অনুসন্ধান নিউজ :: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন বলে দাবি করেছেন দুলাল।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ২টায় সিলেট মহানগরের নাইওরপুলস্থ একটি অভিজাত পার্টি সেন্টারে আয়োজিত মতবিনিময়কালে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশেন (বিএমএ) সভাপতি ডাক্তার দুলাল বলেন- ‘আমি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলাম। আমার নির্বাচনি এলাকা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণের মতামত নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এলাকার মানুষের পাশে থেকে কাজ করার সুবাদে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি দলের মনোনয়ন লাভে সফল হতে পারিনি। তবে দলের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সাংগঠনিক বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেন। বলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দল কোনো শাস্তি আরোপ করবে না। তাই আমি আমার নির্বাচনি এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হই স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়ে মনোনয়ন বাছাইয়ের দিনে ১% ভোটারের সমর্থন তালিকায় ত্রুটি আছে মর্মে আমাকে জানিয়ে কোনো ধরণের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই আমার প্রার্থিতা বাতিল করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঢাকাস্থ নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে কমিশন আমার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয়।’
দুলাল আরো বলেন- ‘আমার নির্বাচনি প্রতীক ট্রাক । প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার কাজ শুরু করি। এসময় সর্বস্তরের মানুষ যে অকুণ্ঠ সমর্থন দিচ্ছেন তাতে আমি অভিভূত। নির্বাচনি মাঠে তারা যেভাবে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন তা প্রমাণ করে এই আসনের মানুষ তাদের পাশে একজন আপনজন পেতে চান। তারা এমন জনপ্রতিনিধি চান- যে সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে, দুর্যোগে-দুঃসময়ে আগলে রাখবে, তাদেরকে সুরক্ষা দেবে। হয়তো নিকট অতীতে তারা সেটি পায়নি বা বঞ্চিত হয়েছে। যে কারণে তারা আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং ট্রাক প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে চাইছেন । যেহেতু এই এলাকায় আগে থেকেই আমার অবাধ বিচরণ- সেহেতু আমার প্রচার কাজ আরও সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠেছে।’
শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ডা. দুলাল বলেন- ‘আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার শুরু থেকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থীর লোকজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করে আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার কর্মীদের সাথে হিংসাত্মক আচার-আচরণ করছেন । তারা আমার পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলছেন। আমার কর্মীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন- আমার পক্ষে কাজ না করার জন্য । উপ-নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের- বিশেষ করে সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাসিয়ে দিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত করছেন। তিনি নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরেই আমার কর্মীদের সাথে হিংসাত্মক আচরণ করার জন্য তার কর্মীদের লেলিয়ে দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর বালাগঞ্জের পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়ন থেকে বালাগঞ্জ সদরে আমার অফিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসার পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য। তারা আমার কর্মীদের আমার পক্ষে কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদান করেন। একই দিনে ফেঞ্চুগঞ্জের উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের পাঠানচক গ্রামে আমার ব্যানার লাগাতে দেন নাই নৌকার প্রার্থীর কর্মীরা । পাঠানচক গ্রামে ট্রাক প্রতীকের সমর্থনে কোনো ধরণের প্রচার-প্রচারণা না চালানো হয় এ বিষয়েও আমার কর্মীদের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। ঘিলাছড়া ইউনিয়নের মোকামের তলবাজারে আমার নির্বাচনি কার্যালয়ে ঢুকে আমার পোস্টার ছিড়ে ফেলে এবং আমার লোকজনকে হুমকি প্রদান করা হয়েছে। জালালপুরে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও নৌকার প্রার্থীর বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত মীর মতিউর রহমান জালালপুরে আমার কর্মীদের প্রকাশ্যে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। এছাড়া ৩টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নৌকার প্রার্থীর লোকজনেরা আমার কর্মীদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে, ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমার কর্মীদের মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রার্থীর তার উশৃঙ্খল কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে আসছেন । বিষয়গুলো আমি রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে মনে হচ্ছে- তারা এ বিষয়ে উদাসীন। তাই সার্বিক নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে আমি উদ্বীগ্ন।’
বিএমএ সভাপতি ডাক্তার দুলাল আরও বলেন- ‘অবহেলিত বালাগঞ্জ উপজেলাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে পিছিয়ে পড়া এ জনপদকে প্রতিটি সেক্টরে স্বয়ংসম্পুর্ণ করাই হবে আমার প্রথম কাজ। বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ খাতকে আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেবো। শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরিকে ঘিরে বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চলে রুপান্তর হয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় শিক্ষা, চিকিৎসায় অগ্রগতির ব্যাপারে আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবো। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ খাতকে আমি আরও বেগবান করবো। বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলাটি উন্নয়নে অনেকাংশে এগিয়ে। প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সঠিক পদক্ষেপের কারণে এ উপজেলাটিতে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় অফিসও হয়েছে। শিক্ষা ও চিকিৎসায় অগ্রাধিকার দিয়ে এ উপজেলাটিকে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ করাই আমার মূল লক্ষ্য থাকবে । সর্বোপরি- সিলেট-৩ সংসদীয় আসনকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সবক্ষেত্রে সমৃদ্ধ নির্বাচনি এলাকায় রূপান্তরিত করাই হবে আমার লক্ষ্য। কারণ- এই আসনে এক সময় সংসদ সদস্য ছিলেন আমার বড় ভাই মরহুম ইনামুল হক চৌধুরী বীরপ্রতীক।
সবশেষে ডা. দুলাল বলেন- ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সম্পর্কে দেওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনাই মানছেন না আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী । বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেকটি নির্দেশনাকে উপেক্ষা করছেন তিনি। নির্বাচনি পরিবেশ বিনষ্ট করছেন তিনি ও তার কর্মীরা। তার কর্মীরা ভোটারদেরকে ভোটে না আসার জন্য বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। তাদের এমন কার্যক্রমে আমি বেশ উদ্বিগ্ন।’