অনুসন্ধান নিউজ :: উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ চেয়ে অনশনে বসা সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনশন অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার বিকেল ৩টা থেকে উপাচার্যের ভবনের সামনে তারা অনশনে বসেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে অনশনে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে।
বৃহস্পতিবার সকাল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শীত থেকে বাঁচতে সড়কের মধ্যেই লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন অনশনকারীরা।
কুয়াশার হাত থেকে রক্ষা পেতে মাথার ওপরে টানিয়েছেন সামিয়ানা। তবু শীতে কাঁপছেন তারা। এর মধ্যেই শুয়ে শুয়ে বই পড়ছেন কেউ কেউ।
এ সময় অনশনকারী জাহিদুল হাসান অপূর্ব বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব। কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাদের টলাতে পারবে না। শুধু ওয়াশরুমের প্রয়োজন ছাড়া আমরা এই জায়গা থেকে উঠব না। কোনো ধরনের খাবারও গ্রহণ করব না।’
তবে অনশনকারীরা নিজ অবস্থানে থাকলেও আন্দোলনকারী অন্য শিক্ষার্থীদের সকালে উপাচার্য ভবনের সামনে দেখা যায়নি।
অনশনকারীরা জানিয়েছেন, অন্য শিক্ষার্থীরা রাতভর বিক্ষোভ করেছেন। ভোরের দিকে হলে গেছেন। কিছুক্ষণ পর আবার এখানে এসে বিক্ষোভ শুরু করবেন।
এর আগে বুধবার রাতে আন্দোলন চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই শিক্ষার্থী। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপরই শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ও আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষকরা উপাচার্য ভবনের সামনে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ না করলে শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। প্রায় দুই ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান শিক্ষকরা।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে খাবারের খারাপ মান, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত ১৩ জানুয়ারি রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরের দিন সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সরে যান। দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এরপর মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও ১৬ জানুয়ারি সকাল থেকে ফের শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ।
বিকেলে তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পুলিশ উপাচার্যকে বের করে তার বাসভবনে নিয়ে যায়।
পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের পরদিন ১৭ জানুয়ারি সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য ফরিদ প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগের বিষয়টি জানান। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নামেন।
এর মাঝে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে ১৭ জানুযারি রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করে পুলিশ।
পরদিন বিকেলে এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশকে সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। এর জেরেই ১৯ জানুয়ারি বুধবার থেকে আমরণ অনশনে যান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আন্দোলন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করেন।