নিউজ ডেস্ক :: ‘এখানে বাস থামানো সম্পূর্ণ নিষেধ। দাঁড়ালেই দণ্ড।’ কিন্তু কে শুনে কার কথা। যেখানে সেখানে থেমে যাচ্ছে গাড়ি। খেয়াল খুশিমতো উঠছেও যাত্রী এভাবেই চলছে প্রাত্যহিক জীবিকা যাপন। বছরের প্রতিটি দিনের মতো রমজান মাসের প্রথম দিনেও একই চিত্র সকাল থেকে শুরু। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানজট। একপর্যায়ে যানজটে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। দীর্ঘ সময়ের এ যানজটে পড়ে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। ফলে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে কারো দুই থেকে তিন ঘণ্টাও লেগেছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম তার ওপর তীব্র ট্র্যাফিক জ্যামে হাঁপিয়ে তুলছে রোজাদারদের।
রোববার সকাল থেকে রাজধানীর পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুরের আগারগাঁও, প্রগতি সরণি, বনানী, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল ও পুড়ান ঢাকার নবাবপুর, এয়ারপোর্ট ও উত্তরায় তীব্র যানজটের খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরজুড়ে নানা সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। সিটি করপোরেশন রাজধানীর ভিন্ন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। বর্ষার আগে নাব্য বাড়াতে বিভিন্ন ড্রেন পরিস্কার ও পুনর্নির্মাণে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। গুলশান-তেজগাঁও লিঙ্ক রোডে ড্রেনেজের কাজ চলছে। উন্নয়ন কাজের কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়ে গাড়ির দীর্ঘ সারি পড়েছে। যানজটে আটকা পড়া তানভীর আহমদ বলেন, ‘মোটরসাইকেলে আধাঘণ্টা লাগছে এইটুকু পথ যেতে। এটা কোনো কথা!’
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেলের স্টেশনের কাজ করছে বিভিন্ন এলাকায়। স্টেশনের কাজের কারণে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব এলাকায় সড়কে রাস্তা সরু হয়েছে। প্রেস ক্লাবের সামনে আট লেনের সড়কে স্টেশনের নিচে মাত্র চার লেন খোলা। ওয়েলকাম পরিবহনের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জীবন বের হয়ে যাচ্ছে যানজটে। গুলিস্তান-মিরপুর এখন তিন ঘণ্টার পথ।’
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত সুজন জানান, প্রথম রমজানে এমন তীব্র ট্র্যাফিক জ্যাম ভাবতে অবাক লাগে। একদিকে গাড়ি স্বল্পতা তার ওপর গাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা খুবই কষ্টকর। তারপরও মিরপুর থেকে ২ ঘণ্টায় মতিঝিলে অফিস আসতে পেরেছি।
দিলকুশার যমুনা এজেন্সির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইদুল জানান, বেলা সাড়ে ৯টার দিকে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল আসতে তার ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। দীর্ঘ যানজটে পড়ে ক্ষুব্ধ অনেক যাত্রীই বাস থেকে নেমে হেঁটে কর্মস্থল বা বাসায় গেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে নগরজুড়ে যানজটের কারণে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহান জানান, বনানী থেকে বাংলামটর এসেছেন অন্তত দুই ঘণ্টায়। এরপর হাঁটতে শুরু করেন তিনি।
ব্যস্ত সড়কের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতেও রিকশাযাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে দেখা গেছে। এসময় আটকে থাকা অনেক যাত্রীকে ঘুমাতেও দেখা গেছে।
যানজটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী, শিশু ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, ‘রোজাদার যাতে নির্বিঘ্নে বাসায় পৌঁছে ইফতার করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে ঢাকার সড়কে পুলিশের বাড়তি প্রস্তুতি থাকছে। ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচি মাথায় রেখে, সকাল ও বিকেলে বিশেষ জোর দিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করা হয়। রমজানের হিসাব আলাদা। সবার চেষ্টা থাকে বাসায় ফিরে ইফতার করা। সেজন্য ২টার আগে থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পুলিশের সবাই মাঠে থাকবে। যেসব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংখ্যা বেশি সেসব এলাকায় বাড়তি সতর্ক থাকবে ট্রাফিক পুলিশ। এ ছাড়া বাণিজ্যিক এলাকা- মতিঝিল, গুলশান, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মোহাম্মদপুর এবং ফার্মগেটেও বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকবে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘বিভিন্ন সড়কে চলমান উন্নয়ন কাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং গাড়ির চাপ- সব মিলিয়ে রমজানে যানজট নিয়ন্ত্রণে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যানজট যে একেবারে হবে না তা বলার সুযোগ নেই।’