শিরোনাম :
জামায়াতে ইসলামী সিলেট মদিনা মার্কেটে ঐতিহাসিক সিরাত মাহফিল ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সিলেটে আলোচিত সুলতান ডাইনকে জরিমানা দূর্গাপুজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে বিজিবির মতবিনিময় র‍্যাবের অভিযানে ৩ নারী ১ পুরুষ আটক সিলেটে প্রাইভেটকারে মিললো ১২ লাখ টাকার ভারতীয় ক্রিম বিয়ানীবাজার দুবাগ ইউনিয়ন বিএনপির জনসভা নতুন প্রজন্মকে মানবিক মুল্যবোধে উজ্জ্বীবিত করতে হবে-প্রাক্তন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে আঞ্চলিক সড়কে ভাঙন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিএনপির সাথে সংলাপের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ ডিবি কার্যালয়ে থাকবে না কোনো আয়না ঘর-ভাতের হোটেল : মল্লিক

বড়লেখায় নির্যাতনের পর প্রতিবন্ধী যুবকের বিরুদ্ধে উল্টো চুরির মামলা!

রিপোর্টার নামঃ
  • বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী এক যুবককে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করার পর ছেড়ে দিয়ে ৪ দিনের মাথায় উল্টো থানায় চুরির মামলা রজু করা হয়েছে। মামলা করেছেন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইমাম উদ্দিন হিফজুরের ছোট ভাই রাজু আহমদ।

গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাজু থানায় এই মামলা করেন। এর দুদিন আগে গত রোববার (১৬ অক্টোবর) বড়লেখা আদালতে ইউপি সদস্য ইমাম উদ্দিন হিফজুর ও তার ছোট ভাই রাজু আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী যুবক কলিম উদ্দিনের বড় ভাই ছইদুর রহমান।

এদিকে প্রতিবন্ধী যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার এলাকাবাসী মানববন্ধন করে। ঐ দিনই পুলিশ রহস্যজনক কারণে প্রতিবন্ধী যুবকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা নেয়। এতে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপি সদস্য ইমাম উদ্দিন হিফজুর ও তার ভাই রাজু আহমদ পূর্ব-মাইজগ্রাম গ্রামের তছির আলীর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী কলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোন চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রচারণা চালায়। গত ১৪ অক্টোবর ইউপি সদস্য ও তার ভাই ফোন করে তাকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে মোবাইল চুরির জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে হাত-পা বেধে বেধড়ক মারপিট করে। প্রচন্ড নির্যাতন চালিয়ে তারা বিভিন্ন সাদা কাগজ ও ষ্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর আদায় করে। এরপরও বিবাদীরা নির্যাতন চালায়। পরে বড়লেখা থানায় নিয়ে পুলিশের সামনে মারপিট করে কলিম উদ্দিনের (প্রতিবন্ধী যুবক) স্বীকারোক্তির একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। এইদিন রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে আধমরা অবস্থায় কলিমকে তার বাড়ির সামনে ফেলে যান ইউপি সদস্যের ভাই রাজু। এসময় কলিম উদ্দিনের আর্তচিৎকারে স্বজনরা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বিয়ানীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা করান। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর বড়লেখা আদালতে ইউপি সদস্য ইমাম উদ্দিন হিফজুর ও তার ছোট ভাই রাজু আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী যুবক কলিম উদ্দিনের বড় ভাই ছইদুর রহমান।

১৮ অক্টোবর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে। মানবন্ধনের পর পুলিশ এলাকায় গিয়ে নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী যুবকের পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীকে শাসায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ এলাকার একাধিক ব্যক্তি প্রতিবেদকের কাছে এমন অভিযোগ করেন।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এর ১৬ ধারা অনুযায়ী, নিপীড়ন হতে সুরক্ষা এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের সুবিধাপ্রাপ্তি পাবার কথা। কিন্তু ওই যুবককে ধরে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে মারধর এবং পরে থানায় নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে থানা পুলিশের এসআই জাহেদ আহমদ কাদের ইশারায় কেনো এমনটি করলেন। এমনকি পরদিনই কাউন্টার হিসেবে চুরির মামলা রেকর্ড করার কারণে থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

থানা কমপ্লেক্সে নিয়ে নির্যাতনের বিষয়ে বড়লেখা থানা পুলিশের এসআই (উপ-পরিদর্শক) জাহেদ আহমদ বলেন, ‘আমি ঐ যুবককে ধরে থানায় আনি নাই। মেম্বার ও তার ভাই রাজু ওই যুবককে থানায় নিয়ে আসছে। ঐ যুবককে থানায় কোনো মারধর করা হয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মনে হয়েছে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। একেক সময় একেক কথা বলছে। পরে মেম্বারের ভাই রাজু তাক নিয়ে চলে যায়। এরপর ১৬ অক্টোবর ঐ যুবকের পরিবার আদালতে মামলা করেছে বলে শুনেছি। পরে ১৮ অক্টোবর রাজু আহমদ বাদী হয়ে থানায় ঐ যুবকের নামে চুরির মামলা করেন। মামলাটি আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপর আমি চুরি যাওয়া মোবাইলটি উদ্ধার ও মামলার তদন্ত শুরু করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে নিজ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমাম উদ্দিন হিফজুর বলেন, ‘আমার মোবাইল চুরি হওয়ায় তাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আনি। তখন মোবাইল নেওয়ার বিষয়টি সে স্বীকার করেছে। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তাকে অন্য কেউ যদি মারে আমি জানি-না। আমি তারে টাচউ (স্পর্শ) করছি না। আমি আমার ভাইয়ে তারে টাচউ (স্পর্শ) করার প্রশ্নউ আসে না। এরপর আমি থানায় জিডি করি। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে কি করেছে জানি না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বড়লেখা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়ারদৌস হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি থানায় নতুন জয়েন করেছি। আমি জয়েনের আগে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত বিস্তারিত বলতে পারবেন।’

নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার দুদিন পর থানায় উল্টো প্রতিবন্ধী যুবকের (নির্যাতনের শিকার) বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আর নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই।’

আলাপকালে বড়লেখা আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইকরাম হোসেন শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবককে নির্যাতনের অভিযোগে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত ১৬ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে আগামী ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি পুলিশে প্রেরণ করেছেন।’

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain