অনুসন্ধান ডেস্ক ::: সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী এনডিসি বলেছেন, চীবর দান অনুষ্ঠান শুধু ধর্মীয় কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের একটি উপায় নয়, বরং এটি আমাদের সবার মধ্যে মানবিকতা, দয়া, সহানুভূতি ও আত্মশুদ্ধির গুরুত্বের প্রতি একটি গভীর প্রতিশ্রুতি। চীবর দান একটি মহান দানের ঐতিহ্য, যা আমাদের শিখায় কিভাবে দানের মাধ্যমে মানবকল্যাণে অংশগ্রহণ করা যায়। বৌদ্ধ ধর্মের মূল শিক্ষা অনুযায়ী, সৎকর্ম, দান, এবং আত্মসমর্পণই জীবনকে আরও মঙ্গলময় ও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। ভিক্ষুদেরকে চীবর দান করা শুধু তাঁদের জীবিকা নিশ্চিত করা নয়, বরং আমাদের নিজের আত্মাশুদ্ধি ও সদ্ভাবনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করা। আপনাদের প্রচেষ্টা ও আধ্যাত্মিক শক্তি আমাদের সমাজে শান্তি, সমঝোতা, এবং সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এই ধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সবরকম সহায়তা প্রদান করে যাতে সমাজে শান্তি ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মিলনমেলা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে যারা চীবর দান করছেন এবং যারা এই অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করেছেন, তাঁদের মাধ্যমে সমাজে শান্তি এবং ভালোবাসার বার্তা ছড়াবে।
গতকাল (৮অক্টোবর শুক্রবার) সিলেট নগরীর আখালিয়ার নয়াবাজার বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
আলোচনা সভায় ঢাকার ধর্মরাজিক বৈদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ আনন্দ মিত্র মহাথের’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রনালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবদায়ক স্থাপতি বিশ্বজিত রড়–য়া, উদ্বোধনী ভাষন প্রদান করেন সিলেট বৌদ্ধ বিহারধ্যক্ষ শ্রীমৎ সংঘ্যানন্দ মহাথের, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি চন্দ্র শেখর বড়–য়া সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক সুজন বড়–য়া।
আলোচনা সভায় উদযাপন কমিটির আহবায়ক উদায়ন বড়–য়া ও মন্টি বড়–য়ার যৌথ পরিচালনায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদ, সিলেট বৌদ্ধ সমিতির সাবেক সভাপতি নিশুতোষ বড়–য়া, সাধারণ সম্পাদক পলাশ বড়–য়া, জ্যোতিমিত্র বড়–য়া মিটুল, পিকলু বড়–য়া, সুকান্ত বড়–য়া, উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মায়ারাম তালুকদার, সদস্য সচিব ইমন বড়–য়া প্রমুখ। চীবর দান অনুষ্ঠানে ধর্মদেশনা করেন মেত্তানন্দ থের, শ্রীমৎ জয়শ্রী থের, শ্রীমৎ মহানাম ভিক্ষু।
সকালে জাতীয় ও ধমীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধপূজা, সংজ্ঞাদান, অষ্টপরিক্ষার দান, সমবেত প্রার্থনা, ধর্মদেশনা, আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান, ও ভিক্ষুদের চীবর দানের মধ্যদিয়ে দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য এই দিনটিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে বিশেষ চীবর (বস্ত্র) দান করেন, যা একটি অত্যন্ত পবিত্র ও মহৎ ধর্মীয় কর্ম হিসেবে বিবেচিত। বৌদ্ধ ধর্মের প্রথা অনুযায়ী, কঠিন চীবর দান বছরের একমাত্র সময় যখন ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে চীবর দান করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই চীবর তৈরি ভিক্ষুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধর্মীয় প্রার্থনা, পূজা এবং দানের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয়। উৎসবটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং সবার মধ্যে সহমর্মিতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে তোলে।