শিরোনাম :

প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে চাই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রিপোর্টার নামঃ
  • মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

অনুসন্ধান ডেস্ক :: সারাদেশে চলমান অপারেশন ‘ডেভিল হান্টে’র কথা উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে কোন ‘শয়তান’ যেন পালাতে না পারে।’ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের উপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ে আয়োজিত কর্মশালা অনুষ্ঠানে এ নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সরকারের আইন, বিচার, ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিব নজরুল, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান।

‘আমরা কোন অপরাধীকে রাস্তায়, বাজারে, মাঠে, ময়দানে, রাজপথে দেখতে চাই না’- উল্লেখ করে

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে চাই। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে বলবো। অপারেশন ‘ডেভিল হান্টের’ বিষয়ে আমি বলবো, কোনো ‘শয়তান’ যেনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে না যেতে পারে।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই অবহিত আছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য- জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুস্কৃতিকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা দেশে বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদিরা দেশের জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুটপাট করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। যারাই তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে তাদেরকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে। দলীয় বাহিনীর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে, অন্যায়ভাবে মামলা-হামলা দিয়ে হেনস্থা করেছে। গণমাধ্যমগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শায়েস্তা করেছে। অনুগত পুজিবাদী শ্রেণী তৈরি করে সম্পদ লুন্ঠন করেছে। সিভিল সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে।’

ক্ষমতায় টিকে থাকতে ফ্যাসিস্ট সরকার অন্যায়ভাবে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে অবৈধ অর্জিত সম্পদ ব্যবহার করে বর্তমানে তারা অপশক্তির সম্পৃক্ততায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।’

জুলাই- আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী, নরহত্যায় জড়িত বিশেষ হেলমেট বাহিনী, ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসর, অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারী, ষড়যন্ত্রকারী, দুস্কৃতিকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী, দুদকের মামলার আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের পুলিশ বাহিনী, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এসকল অপরাধীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতাকারী এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে গত ৮ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশের অভিযান সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত ‘জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের’ মাধ্যমে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’র সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করবেন। সিএমএম আদালত, এমএম আদালত, সিজেএম আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারকগণ, জেলা ম্যাজিস্ট্রটরা, স্পেশাল আদালতের বিচারকগণ, আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবীগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত। এছাড়াও অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামারি ট্রায়ালের জন্য সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৮ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করেছে।

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সচেতন নাগরিক। দেশের জনগণ, সরকার এবং নিজ নিজ দায়িত্বের প্রতি জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা ও কমিটমেন্ট রয়েছে আপনাদের। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপনাদের অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় ভূমিকা পালন করতে হবে।’

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা আদালতে দায়েরকৃত প্রতিটি মামলার ধার্য তারিখে ও সময়ে উপস্থিত থাকুন। প্রসিকিউটিং এজেন্সির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ রাখুন। কোনভাবেই যেন কোন সন্ত্রাসী জামিন না পায়, সবোর্চ্চ সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে আইজিপির টিম মামলাভিত্তিক অগ্রগতি নিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটরদের সঙ্গে ১৫ দিন পর পর বসতে পারেন। আমরা দেখেছি, অগ্রগতি, গেপ, ডকুমেন্ট, নথি পর্যালোচনা ও আদালতে উপস্থাপনের জন্য রাজনৈতিক বিরোধীদের নিধনের জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার হাজার হাজার মামলায় নিরীহ, নিষ্পাপ সাধারণ মানুষকে আদালতের প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বছরের পর বছর জেলে আটকে রেখেছে। নিষ্পাপ মানুষকে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। এই অন্যায় আচরণের বিচার হয়তো একদিন হবে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী, মানুষের বুকে গুলি করে ঝাঝরাকারী, হেলমেট বাহিনী, দুস্কৃতিকারি, উসকানিদাতা, জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শনকারী ও দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার করে আদালতে যাবে আর তথ্যের সীমাবদ্ধতা কিংবা এজেন্সিগুলো ব্যর্থতার কারণে জামিন হয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়বে, এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।’

প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘যখন পুলিশ, কোর্ট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবকিছু ঠিকমতো কাজ করবে তখন মবের প্রকোপ কমে যাবে বলে আমি মনে করি। তখন দেশে একটা সহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। মানুষ দেখতে চায় রাষ্ট্র। সে ক্ষেত্রে আমরা সবাই আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিব। আরো বেশি কোয়ারডিনেট করব। আমরা সবাই রাষ্ট্রের কর্মচারী, একটা পরিবারের সদস্য, সেই বিষয়টা মাথায় রেখে একজন আরেকজনকে সহায়তা করব।’

বিচারপতীদের উদ্দেশ্যে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের যারা জজ (বিচারক) আছেন, তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা হুট হাট করে জামিন দিবেন না। জামিন পাওয়ার পরে একজন মানুষ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য যদি ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যদি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিনবা একই অপরাধ আবার করার চেষ্টা করে, তাহলে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের বিচার্য বিষয় হওয়ার কথা। আবার যিনি জামিনের যোগ্য গত আমলের মত তাকেও জামিন থেকে বঞ্চিত করবেন না। মোদ্দা কথা যে, পরিস্থিতি (সিচুয়েশন) সেটা মাথার মধ্যে রাখবেন।’

আমরা খুব চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা অত্যন্ত কষ্ট করে যখন হত্যা মামলার আসামিকে ধরে আনে, তখন জুলাই গণহত্যা মামলার আসামিকে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে এই আসামি গুলো বেড়িয়ে একটা বিচার প্রক্রিয়াকে কতটা বাধাগ্রস্থ করতে পারে। এখানে আপনাদের রিলাক্স হওয়ার কোন সুযোগ নাই। এটা অবশ্যই আপনারা মাথায় রাখবেন। যারা এখানে প্রসিডিউটর আছেন আপনারা লক্ষ্য রাখবেন- আপনারা হচ্ছেন সরকার এবং কোর্টের মধ্যে অনেক সময় পুলিশের রিপোর্টে যথেষ্ট তথ্য না থাকলে বা আদালত যদি যথেষ্ট পরিমাণ ওয়াকিবহাল না থাকে, অনেক তথ্য দিয়ে, যুক্তি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, দায়িত্ব পালন করার স্কোপ আপনাদের রয়েছে।’

ডিসিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখানে ডিসি যারা রয়েছেন আপনারা জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান। প্রসিকিউটের সঙ্গে আপনাদের বিভিন্ন যোগাযোগ থাকে। আমরা মনে করি, এই চারটা প্রতিষ্ঠান যদি সমন্বয়ের করে একসাথে কাজ করে তাহলে বর্তমান চ্যালেঞ্জটা আরো সফলভাবে (সাকসেসফুল) মোকাবেলা করতে পারবো। আমাদের এখানে গণহত্যা হয়েছে সেটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। ১৫ বছর গুম হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, অরাজকতা হয়েছে এগুলো বানানো কথা না। আপনারা প্রত্যেকে জানেন। নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করেন।’

ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, দেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সব সেক্টরে সংস্কার দরকার। সব সেক্টরকে ধ্বংস করা হয়েছে। ন্যায়ভিত্তিক কাজ করতে হবে। গুমের ঘটনা যেন আর না ঘটে। বিচারবহির্ভূত হত্যা যেন আর না ঘটে। অপরাধীকে যেন আইনের আওতায় এনে বিচার করা যায়। মানবাধিকার করে পুলিশিং সম্ভব। যে আদালত ভিন্নমত দমনে জেলখানাকে ব্যবহার করে না, তেমন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain