নিউজ ডেস্ক :: সিলেটে পাশাপাশি দুটি দিনে বিভাগীয় সমাবেশ করতে চাচ্ছে খেলাফত মজলিস ও জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত প্রথমবার পুলিশের অনুমতি পেতে ‘ব্যর্থ হয়ে’ দ্বিতীয় দফা সমাবেশের ঘোষণা দিলেও খেলাফত এই প্রথমবার ডাক দিয়েছে বিভাগীয় সমাবেশের। ইতোমধ্যে দল দুটি সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে পুলিশ বলছে- এখনো বিভিন্ন দিক বিবেচনা করা হচ্ছে। অনুমতি প্রদানের বিষয়ে আরও পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১০ দফা দাবিতে গত ১৫ জুলাই সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করতে চেয়েছিলো গত এক যুগ ধরে অপ্রকাশ্যে থাকা রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। সাম্প্রতিক সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে পুঁজি করে গত ১০ জুন ঢাকায় বড় সমাবেশ করে হঠাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেওয়ার পরই সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা চালাচ্ছিলো জামায়াত। সিলেট রেজিস্টারি মাঠে বিভাগীয় সমাবশের অনুমতি চেয়ে ৫ জুলাই মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করেন মহানগর জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। তবে ‘নাশকতার আশঙ্কায়’ ওই সমাবেশের অনমুতি দেয়নি পুলিশ।
পুলিশের অনুমতির আগেই সিলেটে সমাবেশ করার তোড়জোড় শুরু করেছিলো জামায়াত-শিবির। ১৫ জুলাইয়ের আগে তারা প্রস্তুতিমূলক সভা করে বিভিন্ন শাখা-সংগঠনের সঙ্গে। এমনকি সমাবেশের তারিখের আগের দিন (১৪ জুলাই) সকালে মহানগর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা সিলেট রেজিস্টারি মাঠ পরিদর্শন করতে যান। এসময় পুলিশ তাদের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করে। পরদিন পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
১৫ জুলাই সমাবেশ করতে না পেরে জামায়াত ওই দিন দুপুর ১২টায় মহানগরের জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তবে ‘পুলিশের ভয়ে’ সেখানে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি দলটি। পরে মহানগরের কুদরত উল্লাহ মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী ২১ জুলাই (শুক্রবার) সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করার দ্বিতীয় দফা ঘোষণা দেন মহানগর জামায়াতের নেতারা। নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, জামায়াতের ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ সমাবেশের ডাকা দিয়েছে দলটি। সমাবেশটির অনুমতির জন্য সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রবের নেতৃত্বে তাদের একটি প্রতিনিধি দল ১৬ জুলাই বিকেলে এসএমপি কমিশনার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে লিখিত আবেদন করে।
এদিকে, জামায়াতের পরদিন (শনিবার- ২২ জুলাই) আট দফা দাবিতে সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করতে চাচ্ছে খেলাফত মজলিস। ইতোমধ্যে পুলিশের কাছে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করেছে দলটি। এ বিষয়ে বুধবার (১৯ জুলাই) বেলা আড়াইটায় সিলেট মহানগরের পূর্ব জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতিবিনিময় করেন খেলাফত মজলিস নেতৃবৃন্দ।
মতবিনিময়কালে দলটির যুগ্ন মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী বলেন- ‘খেলাফত মজলিস জাতীয় সংকট নিরসন এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ ৮ দফা দাবিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার সংগ্রামে নিয়োজিত। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ জুলাই সিলেট রেজিস্টারি মাঠে বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। দফাগুলো হচ্ছে- দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা, গ্রেফতারকৃত আলেম-উলামা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অবাধ সুযোগ নিশ্চিতকরণ, পণ্যমূল্য কমিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব ও দুর্নীতি নির্মূল করা, বেকার সমস্যা সমাধান ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দান এবং ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি পরিহার করা।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য আমরা পুলিশের অনুমতি ও সহযোগিতা চেয়েছি। গত ২২ জুন লিখিত আবেদন করেছি সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরে। গত সপ্তাহে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল এসএমপি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। সিলেট হচ্ছে রাজনৈতিক সম্প্রীতির অনুপম দৃষ্টান্তের জায়গা। তাই আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করছি- পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দিবে এবং আমাদেরকে সহযোগিতা করবে। আর যদি অনুমতি না মিলে তবে অবস্থা বুঝে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’
অনুমতির বিষয়ে এসএমপি’র উপ-কমিশনার (উত্তর) ও ভারপ্রাপ্ত মিডিয়া অফিসার মো. আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম) বুধবার বিকেলে সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘এই দুই দলকে এখন পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কমিশনার স্যার ছুটিতে আছেন। তিনি এসে সিদ্ধান্ত নিবেন।’
এসএমপি কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ (বিপিএম-বার, পিপিএম) অনুমতির বিষয়ে সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘এখনো বিভিন্ন দিক বিবেচনা করা হচ্ছে। অনুমতি প্রদানের বিষয়ে আরও পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’