অনুসন্ধান নিউজ :: নিজের প্রায় আড়াই কোটি টাকার মৌরসী সম্পত্তি রক্ষায় আদালতে মামলা করেছিলেন। সেই মামলা তদন্ত করে পিবিআই অভিযোগের সত্যতা পেয়ে রিপোর্টও দিয়েছে। এরপর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অভিযুক্তরা অভিযোগকারীকে একটি মামলার আসামি করে আবার হুমকি দিচ্ছে, আরও মামলার আসামি করা হবে, যদি জায়গা জমির ভাগ তাদের দেয়া না হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়া না হয়।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেগঞ্জ গ্রামের নূর উদ্দিনের ছেলে মো. রাসেল রবি (৩৫)।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্টিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে রাসেল বলেন, গত ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জের চৌমুহনায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলী আদালতে একটি মামলা (নং ৩৩৭/২০২৪) দায়ের করা হয়। মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে ১৩নং আসামী হিসাবে উল্লেখ করেছেন বাদী গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের দাড়িপাতন খানভিলার মো. মাসুক উদ্দিন। রাসেল ওই দিন ওই সময়ে কানাইঘাটে তার বাড়িতে ছিলেন। তাহলে তিনি কিভাবে এই মামলার আসামী হলেন- প্রশ্ন রাখার পাশাপাশি তার ব্যখ্যাও দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, জায়গা জমি নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বিরোধ থাকায় তিনি গোলাপগঞ্জের বাঘার মৃত নওয়াব আলীর ছেলে নজরুল ইসলামের সাহায্য চেয়েছিলেন। তাকে তার আমমোক্তার নিয়োগ করেছিলেন। বাঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুছ ছামাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তিনি সার্বিক সহযোগীতা পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তারাই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং জাল দলিল তৈরি করে রাসেলের সম্পত্তি নিজেরাই দখল করেন। এই দখলের সাথে আরও জড়িত ছিলেন, বাঘার আব্দুস সুবহানের ছেলে জাকির হোসেন (৪৫), হাজি লাল মিয়ার ছেলে এমএ জামান (৪২), আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুশ শাকুর (৩৮) ও আব্দুছ ছামাদের স্ত্রী রুমেনা বেগম।
তিনি বলেন, তার পিতা এই ৬ জনের বিরুদ্ধে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৫ এ, একটি মামলা দায়ের করেন (নং ৪৪৭/২০২৩)। পিবিআই তদন্ত শেষে ৩০ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এর প্রতিশোধ নিতেই ৪ আগস্টের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাছাড়া জাকির ও জামান নিজেদের বিএনপি নেতা দাবি করে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি ও সম্পত্তির ভাগ না দিলে এরকম শতশত মামলায় তাকে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রাসেলের। এ অবস্থায় তিনি হয়রানি থেকে মুক্তি ও মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে প্রশাসনসহ সবার সহযোগীতা চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে রাসেলের নিযুক্ত আমমোক্তার নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আমাকে একাধিক দাগে কিছু সম্পত্তি রাসেলের পিতাই লিখে দিয়েছেন। এর বাইরে মামলা বা হুমকি সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। অপর অভিযুক্ত আব্দুস শাকুর ও জাকিরের মোবাইলে কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
আর মামলার বাদী মাসুক উদ্দিন বলেছেন, কে বা কারা আমার মামলায় নিরপরাধ মানুষকে আসামি দিয়েছে আমি জানিনা। রাসেল রবি নামে কাউকে আমি চিনিই না। এসব বিষয় নিয়ে গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে আলাপ হয়েছে। তার সঙ্গে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরাসহ আমরা আহতরা বসবো। নিরিহ মানুষকে অবশ্যই অব্যাহতি দেয়া হবে এবং যারা চাঁদাবাজী করতে চাইছে বা করছে, তাদের পরিচয়ও প্রকাশ করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাবো আমরা।