নিউজ ডেস্ক :: রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাসুম মোহম্মদ আকাশ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ। ডিবির দাবি, গ্রেফতার মাসুম মোহম্মদ আকাশ একজন শ্যুটার। টিপুকে সরাসরি গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। হত্যাকাণ্ডের পর শ্যুটার মাসুম দেশ ত্যাগ করতে সীমান্ত এলাকায়ও চলে গিয়েছিল দাবি জানায় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। গ্রেফতার মাসুম চাঁদপুরের মতলবের কাইশকানির মো. মোবারক হোসেনের ছেলে। তিনি রাজধানীর পশ্চিম মাদারটেকের ৬০/১৫ বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন।
রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে ২টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মাসুম জানিয়েছেন হত্যাকাণ্ডের তিন দিন আগে টার্গেট ব্যক্তিকে (টিপু) হত্যা করার নির্দেশ পান। সে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তবে নেপথ্যের কারণ বা মদদদাতা কারা তা জানতে আরো তদন্ত প্রয়োজন। কারণ আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল শ্যুটারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা।
ডিবির মুখপাত্র বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানায়, হত্যাকান্ডের তিনদিন আগে আকাশ ও তার এক সহযোগী হত্যার জন্য টিপুর নাম পায়। আর তখন থেকে সে তার সহযোগীকে নিয়ে রেকি শুরু করে। হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও তারা ওই মটরসাইকেল নিয়ে এজিবি কলোনির ভিতরে অবস্থান করছিল টিপুকে হত্যার জন্য। সেদিন সুযোগ না পাওয়ায় পরদিন হত্যা মিশন শেষ করা হয়। কিলিং মিশনে আকাশ ও তার সহযোগী ছিল যিনি মোটরসাইকেল চালানোর দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনার পরদিন একটি গাড়ি নিয়ে আকাশ জয়পুরহাট চলে যায়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, তদন্তে নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ওই গাড়ির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করার পর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে জয়পুহাট থেকে শ্যুটার মাসুম গ্রেফতার করে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ।
হাফিজ আক্তার বলেন, গত ২৪ মার্চ রাত অনুমান ১০ টা ২০ মিনিটের দিকে শাহজাহানপুর থানাধীন আমতলা এলাকা থেকে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু তার ড্রাইভার মনির হোসেন মুন্না এবং দুই বন্ধু মিরাজ ও আবুল কালাম তার এজিবি কলোনি কাচাবাজার সংলগ্ন গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে মাইক্রোবাসযোগে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। বাসায় যাওয়ার পথে অজ্ঞাতনা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে জাহিদুল ইসলাম টিপু ও তার ড্রাইভার এবং রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি গুরুতর জখম করে। তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম জাহিদুল ইসলাম টিপু ও রিকশারোহী প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় শাহজাহনপুর থানায় একটি মামলা হয়। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে।
প্রথম দিন ব্যর্থ হয় হত্যার চেষ্টা:
হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শ্যুটার আকাশ জানিয়েছে, গ্রেফতর মাসুম মোহাম্মদ আকাশ ঘটনার আগের দিন ২৩ মার্চ জাহিদুল ইসলাম টিপুকে তার কমলাপুরের রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় যাওয়ার রাস্তা অনুসরণ করে গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু বেশি লোকজন থাকায় সে ব্যর্থ হয়।
অনুসরণ করে শাহজাহানপুরে এসে হত্যা
ঘটনার দিন ২৪ মার্চ একজন ফোন করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাসুমকে জানায়, টিপু তার অফিসে (রেস্টুরেন্ট) অবস্থান করছে।
এই সংবাদ পেয়ে মাসুম দ্রুত টিপু’র রেস্টুরেন্টের কাছ থেকে টিপুকে অনুসরণ করে গুলি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু টিপু অনেক লোকজনের মধ্যে থাকায় গুলি করতে না পেরে টিপুর গাড়ি অনুসরণ করে। টিপুর গাড়ি শাহজাহানপুর রেল লাইনের আগে আমতলা রাস্তায় যানজটে আটকা পড়লে গ্রেপ্তার শ্যুটার আকাশ গাড়ির চালককে পাশের আসনে বসা টিপুকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়।
দেশ ত্যাগের চেষ্টা:
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির মুখপাত্র বলেন, ঘটনার পর দুই বন্ধুর সহযোগীতায় নিরাপদ স্থানে আত্মগোপনে যায় শ্যুটার মাসুম। পরে সে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিরপরাধ রিকশারোহী প্রীতি এবং টিপুর মৃত্যুর সংবাদ দেখতে পায়। এরপর সে জয়পুরহাটে চলে যায়। সেখানে সীমান্ত পার না হয়ে বগুড়ায় চলে আসে। সেখানে তার অবস্থান নিশ্চিত হবার পর বগুড়া জেলা পুলিশের সহযোগিতায় শ্যুটার মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কারা মাসুমকে কিলিংয়ের কন্ট্রাক করেছিলো? এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, কারা কন্টাক্ট করেছে তাদের কয়েকজনের নাম সে বলেছে। টাকা নেয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সুবিধা পাইয়ে দেয়া, তার নামে মামলা তুলে নেয়ার সুবিধার বিষয় থাকতে পারে।
হাফিজ আক্তার দাবি করে বলেন, অনেকদিন পর শ্যুটিং কিলিং এ ঘটনা। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করেছি। শ্যুটিং মিশনে অনেকগুলো গুলি ছোড়া হয়। মূল কিলার গ্রেপ্তার হয়েছে। এখন তদন্তে জানা যাবে মোটিভ। আর কারা ছিল, কি কারণে খুন, পেছনে কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা চলছে।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি, তবে কিসের ভিত্তিতে বলছেন মাসুমই টিপু হত্যার শ্যুটার? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার দাবি করে বলেন, তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি, সে কিলিং মিশনে ছিল। ঘটনার পর ৫/৬ ঘন্টার মধ্যেই নিশ্চিত হই, সেই কিলিং মিশনে সেসহ দুজন ছিল। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। পালানোর সময় তার কর্মকান্ড, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোটরসাইকেলের ব্যবহার সব মিলিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করেছি।