নিউজ ডেস্ক :: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ১৪ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি এদিন বিকেল ৫টার মধ্যে ছেলেদের ও আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে যাদের বাড়ি দূর-দূরান্তে তারা বাস বা ট্রেনের টিকিট পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। দুর্ভোগ সঙ্গী করেই ব্যাগ নিয়ে হল ছাড়তে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
চুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী আবির হোসেন মণ্ডল বলেন, আমার বাড়ি রংপুর। হল ত্যাগের পর এখন গাড়ি অপেক্ষায় বসে আছি চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের চুয়েট গেইটে। এখন সময় প্রায় ৪টা। চট্টগ্রাম শহরের রেলস্টেশনে পৌঁছাতে অন্তত ৬টা বাজবে। তাও সেখানে গিয়ে যে রেলের টিকেট পাব কোন নিশ্চয়তা নেই। তম্মধ্যে পড়ছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। এখন যে কী করব, কোথায় যাব তা ভেবে পাচ্ছি না।
যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসাইন বলেন, হল ত্যাগে সাথে ঝরছে বৃষ্টি। চুয়েট গেইটে একটি দোকানে গাড়ির অপেক্ষায় আছি। আমার বাড়ি রাজশাহী। চট্টগ্রাম শহরে কিভাবে পৌঁছব আপাতত সে চিন্তায় আছি। শহরে পৌঁছতে পারলে আত্মীয়ের আসায় রাতটা কাটানো যাবে। পরদিন বাড়ি যাব।
একই কথা বলেছেন কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মজহার হোসেন। তার বাড়ি বরিশাল। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আমার কোন আত্মীয়-স্বজন নেই। আমি হলে থাকতাম। কিন্তু হঠাৎ হল ত্যাগের নির্দেশে আমি চরম বেকায়দায় পড়েছি। কোথায় যে যাব, বা কোথায় থাকব সে চিন্তায় আছি।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন নয়ন বলেন, আমার বাড়ি কক্সবাজার। যে কোনোভাবে আমি বাড়ি পৌঁছাতে পারব। কিন্তু বৃষ্টি দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে খারাপ লাগছে, আমার সহকর্মীদের জন্য। ওদের অনেকের বাড়ি সিলেট, কারো বাড়ি ময়মনসিংহ, কারো বাড়ি খুলনায়। ব্যাগ মাথায় নিয়ে ওরা ঝড়-বৃষ্টি মাড়িয়ে কিভাবে যে বাড়ি যাবে আল্লাহই জানেন। তাদের কষ্টে আমিও ব্যথিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়েটের রেজিস্টার ফারুক উজ-জামান চৌধুরী বলেন, উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত শনিবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। রোববার রাত পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। সোমবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ছিল থমথমে। দুই পক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন হলগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। ফলে উত্তেজনা কমাতে চুয়েট বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চুয়েটের তথ্যমতে, ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশের দাবিতে সোমবার ক্লাস বর্জন করেছে। দোষীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে ক্যাম্পাসের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সমন্বয় সভায় চুয়েট বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চুয়েটে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী, অন্যটি সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। উপমন্ত্রী নওফেল অনুসারীরা অবস্থান নিয়েছে ড. কুদরত-এ-খুদা হলে। আর নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা অবস্থান নিয়েছে শহীদ তারেক হুদা হলে।