নিউজ ডেস্ক :: বিএনপি নির্বাচনে না আসার ঘোষণায় অটল থাকায় পোয়াবারো অবস্থা ছোট ছোট দলগুলোর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটে থাকা অন্য দলগুলো তাই নড়েচড়ে বসেছে। এবার আওয়ামী লীগের কাছে আগের যে কোনো নির্বাচনের তুলনায় বেশি আসন চায় তারা। এ জন্য নিজ নিজ দল থেকে আগেভাগে মনোনয়ন তুলছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। শরিক দলের নেতারা জানান, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণই হবে। তারা জোটের সঙ্গে থাকলেও গত পাঁচ বছর সরকারে ছিলেন না। কাজেই এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষির সুযোগ বাড়বে এবং জোট থেকে নিজেদের প্রার্থীও বাড়বে।
এই অবস্থায় রাজশাহী সদর আসনের জন্য গতকাল বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তবে জোটের আলোচনা ছাড়া মনোনয়ন তোলায় চটেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে সদর (রাজশাহী-২) আসনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপির দখলেই ছিল আসনটি। ২০০৮ সাল থেকে জোটবদ্ধ নির্বাচনে নেমে এ আসনটি বরাবরই ছেড়ে দিয়েছে অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে। যদিও আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া একাধিকবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরেছেন ফজলে হোসেন বাদশা, কিন্তু নৌকা প্রতীক পেয়ে টানা তিনবারের এমপি হয়েছেন তিনি।
এই আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির নিজস্ব ভোটব্যাংক নেই, কিন্তু শরিক দলের কোটায় দলটির সাধারণ সম্পাদক বাদশা বারবার এমপি হয়েছেন। এবার তাকে ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তাই এই আসনে দলের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সহসভাপতি ডা. তবিবুর রহমান শেখ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু এবং মহানগর যুবলীগের সাবেক সভাপতি রমজান আলী। আসনটি এবার ছেড়ে না দিতে দলীয় নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে আবেদনও করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের অভিযোগ, বাদশা আওয়ামী লীগের ভোটে বারবার এমপি নির্বাচিত হলেও প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে জনসভায় বিষোদ্গার করে বেরিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সুসম্পর্ক রাখেননি।
এদিকে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের প্রার্থী হতে গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়ন তুলেছেন ফজলে হোসেন বাদশা। দুপুরে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের কাছ থেকে বাদশার পক্ষে মনোনয়ন তোলেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে আগেভাগেই মনোনয়ন তোলায় বাদশার ওপর আবারো চটেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথাবার্তা না বলেই তিনি কেন মনোনয়নপত্র তুললেন? তিনি একক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে এখানে তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী হবে। তাকে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে।
দেবাশিষ প্রামানিক দেবু বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা জোটেরই এমপি। আমাদের দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব। কাজেই তিনি বরাবরের মতো এবারো রাজশাহী সদর থেকে নৌকারই প্রার্থী হবেন। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই’।
জাসদ : অপরদিকে বসে নেই আওয়ামী লীগের জোটের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এরই মধ্যে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের জন্য মহানগর জাসদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল কবির বাবু এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের জন্য কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জুলফিকার মান্নান জামি দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শিগগিরই তারাও মনোনয়ন ফরম তুলবেন বলে জানান দলটির নেতারা। এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর জাসদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী বলেন, ‘এবার আমরা দলীয়ভাবেই আওয়ামী লীগের কাছে ২০টি আসন চেয়েছি। এর মধ্যে দরকষাকষিতে যে কটি আসন জাসদকে ছেড়ে দেওয়া হবে তার মধ্যে রাজশাহী সদর আসন থাকবে।’
মনোনয়ন দৌড়ে জাপার প্রার্থীরা : এদিকে রাজশাহীর ছয়টি আসনেই জাপার সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন। রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) লাঙলের টিকিট পেতে দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন গোদাগাড়ী উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান, সদস্য অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন ও তানোর উপজেলা সভাপতি শামসুদ্দিন মণ্ডল। রাজশাহী-২ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন দলটির মহানগর শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন আলী। এ ছাড়া রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম খান, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে উপজেলা শাখার সভাপতি আবু তালেব। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনে দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আবুল হোসেন এবং রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে জেলা শাখার আহ্বায়ক শামসুদ্দিন রিন্টু ও জাপা নেতা মশিউর রহমান। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তে আমরা মনোনয়ন তুলছি। দল যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি।
মনোনয়নপত্র তুলেছেন তিনজন : এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের নির্বাচনী সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, বুধবার বিকেল পর্যন্ত তিনজন মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এরা হলেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের জন্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বাবুল হোসেন ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে খায়রুল ইসলাম। বাবুল হোসেন ও খায়রুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন তুলেছেন। তবে ফজলে হোসেন বাদশা দলীয় পরিচয়ের ঘরে কিছু লেখেননি।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে আগামী ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।