নিউজ ডেস্ক :: মানবপাচারকারী চক্রের মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে ‘৭ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)’। বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কানেহাত গ্রাম থেকে এ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কানেহাত গ্রামের মাসুক মিয়া লেচুর ছেলে মো. শাহীন আলম (৪০) ও সাইদুর রহমান (৪৪)।
বিষয়টি ‘৭ এপিবিএন’র মিডিয়া সেল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এপিবিএন জানায়- মধ্যপ্রচ্যের সাধারণ প্রবাসী ও দেশের সহজ-সরল মানুষদের তার্গেট করে তাদের কাছ থেকে এক শ্রেণির দালাল এবং মানবপাচার চক্র দীর্ঘদিন থেকে ইউরোপের স্বপ্ন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন এক চক্রের মূল হোতা শাহীন আলম। সহযোগী হিসেবে রয়েছেন তার ভাই সাইদুর রহমান। তাদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন একই জেলার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামের এলাইচ মিয়ার ছেলে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী ইসলাম উদ্দিনসহ কয়েকজন।
এ ঘটনার পর ইসলাম উদ্দিনের ভাই মাওলানা সালাহ উদ্দিন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ‘৭ এপিবিএন’। একপর্যায়ে বুধবার সকালে মানবপাচারকারী দুই ভাই শাহীন আলম ও সাইদুর রহমানকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে এ বাহিনী।
মামলার বাদী মাওলানা সালাহ উদ্দিন জানান- তার ভাই ইসলাম উদ্দিন ও শাহীন উদ্দিন নামে আরেক ভাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিকের কাজ করেন। মানবপাচারকারী শাহীন আলমও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করার সুবাদে তার ভাইদের সাথে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ইসলাম উদ্দিনসহ আরো ২০/২৫ জন প্রবাসীকে সেখান থেকে আমেরিকায় পাঠানো প্রলোভন দেখান শাহীন আলম। তার প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে ইসলাম উদ্দিন আমেরিকায় যাওয়ার জন্য ১৮ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তি করেন শাহীন আলমের সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসে শাহীন আলমকে নগদ ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন তিনি। টাকা পেয়ে শাহীন আলম জানায়- ইসলাম উদ্দিন যে মালিকের কাছে আছে তার কাছ থেকে আমেরিকা পাটানো যাবে না। তাই ইসলাম উদ্দিনকে গত বছরের ১২ এপ্রিল দেশে পাঠিয়ে দেয় শাহীন আলম। দেশে আসার পর শাহীন আলমের সহযোগী তার ভাই সাইদুর রহমানের কাছে ইসলাম উদ্দিন জমি বিক্রি করে নগদ ৮ লাখ টাকা দেন।
এক পর্যায়ে ইসলাম উদ্দিনকে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে আমেরিকা নেওয়া কথা বলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যায় শাহীন আলম। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার চক্রের সদস্যদের কাছে ইসলাম উদ্দিনসহ আরো কয়েকজনকে জিম্মি করে রাখে। কারো সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু জিম্মিদের আমেরিকায় না পাঠিয়ে উল্টো তাদের পরিবারের কাছে আরও টাকা দাবি করে চক্রটি। গত বছরের ১০ নভেম্বর ইসলাম উদ্দিনকে ফের দেশে পাঠিয়ে দেয় তারা। ইসলাম উদ্দিনসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমেরিকার বদলে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেয় চক্রটি। অনেকেই লাখ লাখ টাকা খুইয়ে এখন পথে বসেছেন।
এদিকে, কিছুদিন আগে শাহীন আলম দেশে আসলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ইসলাম উদ্দিন ও তার পক্ষের লোকজন শাহীন আলমের এর কাছে গেলে তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ ইসলাম উদ্দিনকে হত্যার হুমকি প্রদান করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আইনের আশ্রয় নেন তারা।
‘৭ এপিবিএন’ শাহীন আলম ও সাইদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর কুলাউড়া থানায় হস্তান্তর করেছে।