অনুসন্ধান নিউজ :: নিঃসন্তান বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাচ্ছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ দীপশিখা ইনফার্টিলিটি কেয়ার এন্ড কাউন্সিলিং সেন্টার। দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের মুখ দেখতে না পাওয়া বাবা-মা সন্তান পেয়ে হাসি মুখে ঘরে ফিরছেন। টেষ্টটিউব পদ্ধতি বা আইভিএফ পদ্ধতিতে চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের উদ্যোগ নেয়া হয়, আর সেখান থেকে সন্তানহীন বাবা-মা চিকিৎসা নিয়ে দেখছেন সন্তানের মুখ। সম্প্রতি দীপশিখা ইনফার্টিলিটি কেয়ার এন্ড কাউন্সিলিং সেন্টারে এক সঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন চা শ্রমিক দ্বীপ্তপাসীর স্ত্রী মনি রাজক। তারা মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুরভুরিয়া চা বাগানের বাসিন্দা। দুই কন্যা সন্তানের নাম রাখা হয়েছে মনিষা-মৌমিতা।
জানা যায়, ২০১৮ সালে শ্রীমঙ্গলের কলেজ রোডে প্রসূতি, স্ত্রীরোগ এবং বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় দীপশিখা ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড কাউন্সিলিং সেন্টার গড়ে তুলেন ডা. নিবাস চন্দ্র পাল।এ পর্যন্ত আইইউআই পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে ৮৫জন নারী মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন। ২০২১ সাল এর ডিসেম্বর থেকে টেস্ট টিউব বেবী (আই ভি এফ) কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত ১২৫জন নারীর জরায়ু তে ভ্রুন প্রতিস্থাপন হয় তন্মধ্যে ২৫জন মা সন্তান লাভ করেন। ২৩ জনের বিভিন্ন রোগের কারণে সন্তান জন্মদান ব্যাহত হয়।বর্তমানে ৩৯জন মা গর্ভাবস্থায় রয়েছেন। সেন্টারটিতে শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিঃসন্তান দম্পতিরা চিকিৎসা নেবার জন্য আসছেন।এখানে চিকিৎসা নিয়ে তাদের অনেকেই হাসিমুখে বাচ্চা কোলে নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। ছয়তলা ভবনটিতে রোগীদের সুবিধার জন্য রয়েছে ডাক্তার চেম্বার, ফার্মেসী, প্যাথলজিকাল ল্যাব, এসি–নন এসি কেবিন, হাইড্রো ইলেকট্রিক বেড, ইন্টারকম সার্ভিস, ল্যাপরোস্কোপি মেশিন, ট্রান্সভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফি, অক্সি কনসেনট্রেটর মেশিন, পালস অক্সিমিটার, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইনসিনারেটর মেশিন, অটো জেনারেটর, সর্বাধুনিক লিফট, সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্য অপারেশন থিয়েটার, খাওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি।
টেষ্টটিউব পদ্ধতিতে দুই কন্যা সন্তান জন্ম দেয়া মনি জানান, বিয়ের দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মা হতে পারছিলেন না। বিভিন্ন সময় অনেক চিকিৎসকের কাছে গিয়েও সন্তানের মুখ দেখতে পারিনি।পরে উনার শ্বাশুড়ির মাধ্যমে জানতে পারেন এখানে চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই বাবা-মা হয়েছেন। এরপর উনারা দীপশিখা ইনফার্টিলিটি কেয়ার এন্ড কাউন্সিলিং সেন্টারে এসে চিকিৎসা নিয়ে এখন দুটি মেয়ে সন্তান হয়েছে।এতে উনাদের পরিবারের সবাই অনেক খুশি।
হাসপতালে নাতনীকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন মনির শ্বাশুড়ি মিনা পাসী । তিনি বলেন, ১২ বছর আগে আমার ছেলের বিয়ে হয় ।বিয়ের পর থেকে আমার ছেলে ও ছেলের বউ সন্তানের জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। আমরাও বিভিন্ন জনের কথায় তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিতে পাঠাই।কিন্তু তাতেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। পরে জানতে পারি এখানে চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই বাবা-মা হয়েছেন।তাই গরীব মানুষ হওয়া সত্বেও টাকা পয়সার দিকে না তাকিয়ে তাদেরকে এখানে পাঠাই। ভগবান চেয়েছেন বলে আজ আমি দুই নাতনির মুখ দেখেছি। খুব স্বল্প খরচে আমরা চিকিৎসা পেয়েছি।
এবিষেয়ে বন্ধ্যাত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিবাস চন্দ্র পাল জানান, মফস্বল পর্যায়ে এবং সিলেট বিভাগে তিনিই প্রথম ইনফার্টিলিটি কেয়ার কাউন্সিলিং সেন্টার স্থাপন করেন।
তিনি বলেন, চিকিৎসা নিয়ে সবাই যে সফল হবে তা কিন্তু না। আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) এমন একটি পদ্ধতি শতভাগ সফল হওয়া কোনো দেশেই সম্ভব না। আমাদের দেশে যারা কাজ করেন শতকরা ৩০-৪০ ভাগ হতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় গর্ভে সন্তান রয়েছে।কিন্তু মধ্যখানে যে আট-নয়টি মাস রয়েছে সে-সময় অনেক ঘটনা ঘটে যায়। তারমধ্যে পেটে বাচ্চা মারা যায়, বাচ্চার রক্ত ভেঙ্গে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
এক সঙ্গে দুই সন্তান জন্মের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা চা শ্রমিক। চিকিৎসা করাতে আগ্রহী থাকলেও টাকা-পয়সার জন্য পিছিয়েছিল।তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমরা চিকিৎসা শুরু করি এবং দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে সিজারের মাধ্যমে গত সপ্তাহে। বর্তমানে তারা দুজনেই সুস্থ রয়েছে।