নিউজ ডেস্ক :: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে সরকার অনেকটা ‘নমনীয়’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র। যদিও বিএনপি নেতারা এসব বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। সরকারের এই ‘নমনীয়তার’ ফলে এবার চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি মিলতে পারে। এ বিষয়ে করা আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন আইন মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মতামত দিলেই সুযোগ সৃষ্টি হবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার।
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে। এজন্য বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনগুলো অব্যাহত রেখেছে বিক্ষোভ সমাবেশ।
খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। তার এ আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
এর আগে গত রবিবার নয়াপল্টনে এক সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ৪৮ ঘণ্টা আলটিমেটাম দেয় বিএনপি। সোমবার এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই। তিনদিনের মাথায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে আইনমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের বক্তব্যে অনেকটা নমনীয়তা প্রকাশ পাওয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের এক নেতা নাম না বলার শর্তে বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে নমনীয়। অচিরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এবিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানি না।’
তিনি বলেন, ‘লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে না পাঠালে যেকোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে।’
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) দেশের বাইরে নেওয়া হচ্ছে কিনা তা জানি না। তবে, তার শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে প্রতিটি সময় কাটাচ্ছি।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে ঢাকা টাইমসকে জানান। তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছি। আমাদের আহ্বান খালেদা জিয়াকে স্থায়ী মুক্তি দিয়ে যেখানে তিনি চিকিৎসা করতে চান সেখানেই তাকে যেতে দিতে হবে। এর জন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি।’
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। তবে, সরকার যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে তাদের জন্য, দেশের জন্য, রাজনীতির জন্য ভালো সংবাদ হবে।’
তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়াই পারেন দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে।’
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।
সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।