মুসলিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব

রিপোর্টার নামঃ
  • বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

গোয়াইনঘাট সংবাদদাতা :: বাঙালি সংস্কৃতির সাথে আষ্টেপৃষ্টে মিশে আছে পিঠাপুলির নাম। তবে আধুনিক পিজ্জা বার্গারের ছোঁয়ায় পিঠাকে ভুলেই যেতে বসেছিলো বাঙালি।কিন্তু ধীরে ধীরে বাঙালির জীবনে ফিরে আসছে গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে বৃহস্পতিবার (২০ এ ফেব্রুয়ারী) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের মুসলিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসব। পিঠা পুলির ঘ্রাণে মুখোরিত হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
দেশি বাহারি পিঠা প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। পিঠা উৎসব উপলক্ষে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবকদের আগমনে স্কুল প্রাঙ্গণ মিলন মেলায় পরিণত হয়।
এ উৎসবে ছিলো হরেক রকমের পিঠার আয়োজন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানান ধরনের মুখরোচক পিঠা প্রদর্শনী করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা এবং ঐতিহ্য ধরা রাখাই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য।
বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা স্টলে নানা আইটেমের পিঠা নিয়ে উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের তৈরি করা এসব পিঠা দেখতে বিভিন্ন স্টলে ভিড় করেছিল অবিভাবকেরা।
প্রতিটি স্টলে নানা রকম পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে রাখা আছে। এর মধ্যে কতিপয় পিঠা একেবারেই নতুন আবার কিছু অতিপরিচিত। প্রতিটা পিঠার ওপরে লেখা আছে পরিচিতি নাম। এসব পিঠার নামও বেশ বাহারি।
উৎসবে ছিলো ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের রসের পিঠা, ক্ষীর কুলি,গোলাপ ফুল পিঠা, রস পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, দুধ চিতই, ফুল পিঠা, সেমাই পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠাসহ আরও বাহারি সব নামের পিঠা।
পিঠা উৎসব দেখতে এসে শিশু শিক্ষার্থীরা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরে দেখছেন স্টল। জানছেন নতুন নতুন পিঠা সম্পর্কে। পুরো স্কুল মাঠ রূপ নিয়েছে অনিন্দ্য মিলনমেলায়। জানা-অজানা পিঠার সম্পর্কে জানতে পেরে এবং স্বাদ গ্রহণ করতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক অবিভাবক বলেন, পিঠা উৎসব এখন শহরের আনুষ্ঠানিকতায় পরিনত হয়েছে। এই উৎসবের কারণে গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি। এখানে এসে বেশ ভালো লাগছে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসান জানায়, বাহারি রকমের এতো পিঠা একসঙ্গে এরআগে কখনো দেখা হয়নি। আজ স্কুলে পিঠা উৎসব। সহপাঠীদের সঙ্গে পিঠা খাচ্ছি। অনেকে সিনিয়র ও জুনিয়র আপু ভাইয়ারা পিঠা বিক্রি করছে এতে খুব আনন্দ হচ্ছে।
মুসলিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজিত আচার্য্য বলেন, পিঠা-পুলি হলো আমাদের লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ। শহর কেন্দ্রীয় জীবন জীবিকার কারণে এই দেশজ উৎসব কমে গেছে। পিঠা উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাঙালির নানা রকমের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে স্মরণ করতেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে এ উৎসবের আয়োজন করেছে।
অংশগ্রহণ করে বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরা বলেন, পিঠা উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাঙালির নানা রকমের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি ধরে রাখতে হলে এরকম আয়োজনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। পিঠা উৎসবকে উপলক্ষ করে অনেকদিন পর স্কুলে আসলাম। বেশ ভালোই লাগলো।
বিকেলে মুসলিমনগর উচ্চ বিদ্যালয় এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আলীমের সভাপতিত্বে ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলী হোসেনের সঞ্চালনায় পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহজাহান সিদ্দিকী, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আমজাদ বখত, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক জাহিদ খান প্রমুখ।
এ সময় বিএনপি নেতা আজির উদ্দিন, মুসলিমনগর উচ্চ বিদ্যালয় এর সাবেক সভাপতি রুকনুজ্জামান রুকন, প্রধান শিক্ষক বিজিৎ আচার্য্যসহ অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain